নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: আদালতের রায়ে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ দিন পর পদ হারালেন সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার সদ্য বিজয়ী মেয়র ফারুক আহমদ। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া পৌরসভা নির্বাচনে তিনি দুই ভোটে পরাজিত হয়ে আদালতে মামলা করেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর আদালতের রায়ে মেয়র পদ ফিরে পেয়েছিলেন ফারুক আহমদ। ১৩ আগস্ট শপথ নিয়ে পরদিন ১৪ আগস্ট থেকে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ দিন পর আবার পদ হারিয়েছেন তিনি। গত সোমবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি দেশের ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সব পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর ফলে ফারুক আহমদও মেয়র পদ হারিয়েছেন। এখন পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অর্নব দত্তকে।
জানাগেছে, ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে বেসরকারভাবি বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল আহাদকে। দুই ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন ফারুক আহমদ। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ওই বছরই সিলেট যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ফারুক আহমদ। মামলায় পাঁচটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পুনর্গণনার আবেদন করেন তিনি। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কয়েক দফায় আদালতে ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। বাদী ও বিবাদীপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পুনরায় ভোট গণনায় ফারুক আহমদ চার ভোট বেশি পেয়েছেন বলে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিচারক। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৯ অক্টোবর আব্দুল আহাদ সিলেটে আপিল মামলা দায়ের করেন। শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন সিলেটের আপিল আদালতের বিচারক এবং জেলা ও দায়রা জজ এ কিউ এম নাছির উদ্দীন দরখাস্তকারী আব্দুল আহাদকে ৬ ভোটে পরাজিত ঘোষণা করেন। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় বহাল রেখে ফারুক আহমদকে বিজয়ী ঘোষণা করে আব্দুল আহাদের আবেদন খারিজ করেন বিচারক। ওই আদেশের পর নির্বাচন কমিশন জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ফারুক আহমদকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করলে ১৩ আগস্ট সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী শপথবাক্য পাঠ করান। ১৪ আগস্ট ফারুক আহমদ মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে নিয়ে কথা হলে নবনির্বাচিত মেয়র ফারুক আহমদ বলেন, তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হলেও কারচুপির মাধ্যমে তাঁকে পরাজিত করা হয়েছিল। আদালতের শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘদিন পর ন্যায়বিচার পেয়েছিলেন। তিনি দেশের অন্য পৌরসভার মেয়রদের মতো এত দিন দায়িত্বপালন করেননি। তাঁর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর শুক্রশনিবারসহ মাত্র পাঁচ দিন দায়িত্বে ছিলেন। এই পাঁচ দিনে বিশেষ কোন কাজও করতে পারিনি। সোমবার পৌরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে থাকাকালে খবর পাই পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করা হয়েছে। এরপর পৌরসভা কার্যালয় ত্যাগ করি। তিনি জানান, আদালতের রায়েই তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আদালতের রায়ের বিষয়টি বিবেচনা করে তাঁকে যাতে সুযোগ দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে তিনি আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে আবারও আদালতের দ্বারস্থ হয়ে দায়িত্বভার পাবেন বলে আশা করেন।
Leave a Reply